ছত্তিশগড় বস্তারে সংবাদ মাধ্যম এবং মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মীদের ওপর বিভিন্নভাবে আক্রমণ শাণানো হচ্ছে। সাংবাদিক, আইনজীবী এবং অন্যান্য মানবাধিকার কর্মীদের অকারণ গ্রেফতার, প্রাণে মারার হুমকি, সংগঠিত প্রতিরোধের মাধ্যমে এমন অবস্থা তৈরি করা হয়েছে যাতে ওখানকার কোনোরকম খবর বাইরের জগতের কাছে না পৌছায়।
সন্তোষ যাদব নবভারত এবং দৈনিক ছত্তিশগড়ের পূর্বতন কর্মী। সশস্ত্র সংগঠন, ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদি) নামক নিষিদ্ধ গোষ্ঠির সদস্য হিসাবে অভিযুক্ত। ইউ,এ,পি,এ এবং সি,এস,পি,এস,এ ধারাগুলিতে অভিযুক্ত। দোষী সাব্যস্ত হলে ১০বছরের সাজা।
বাস্তার জেলার দারবা নামক ছোট্ট একটি জনপদে সন্তোষ যাদবের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। স্কুলে পড়ার সময় তার ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে পুলিশ অফিসার হবার। কিন্তু হয়ে গেলেন সাংবাদিক। নিজের এলাকায় মাওবাদি সংগঠন এবং পুলিশি অত্যাচারের খবর বাইরের জগতের কাছে পৌছে দেওয়াই তার মুখ্য কাজ। নবভারত এবং দৈনিক ছত্তিশগড় নামক জাতীয় এবং স্থানীয় সংবাদপত্রের সংবাদ পরিবেশক। কিন্তু রাষ্ট্রের সপক্ষে সংবাদ পরিবেশন করতে না চাওয়ার কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দরবা জঙ্গলের ভেতর মাওবাদি দমনের নামে বদ্রিমাহু গ্রামের ৫জন আদিবাসীকে রাজ্য পুলিশ গ্রেফতার করে। গ্রামবাসীদের বক্তব্য তাদের মিথ্যা মামলায় ফাসানো হয়েছে। সন্তোষ যাদব বদ্রিমাহু থেকে শুধু এই ঘটনার বিবরণ পাঠিয়েই ক্ষান্ত হননি, আদিবাসীদের জগদলপুরের আইনি সহায়তা কেন্দ্রের সাথেও যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন, যাতে তারা আদালতে এই গ্রেফতারির বিরোধিতা করতে পারে।
রাজ্য পুলিশের হাতে আদিবাসীদের এই নিগ্রহ সন্তোষ যাদবের সংবাদের ফলে সকলের দৃষ্টিগোচর হয়। ফলে এর কয়েকদিনের মধ্যেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের কারণ হিসাবে বলা হয়, ২৯শে সেপ্টেম্বর প্রতিরক্ষা বাহিনীর ওপর সশস্ত্র মাওবাদী নাশকতায় তিনি যুক্ত ছিলেন এবং সন্ত্রাস ও অপরাধ মূলক ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে খুন এবং নিষিদ্ধ মাওবাদী সংগঠন, ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদি), এর সক্রিয় সদস্য হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ছত্তিশগড় জনসুরক্ষা আইন এবং ইউ এ পি এ ধারায় চার্জ গঠণ করা হয়েছে। এই দুটো আইনই আন্তর্জাতিক মানবিধিকার রক্ষা বিধি ও আরও অনেক আইনের পরিপন্থী। অভিযোগ প্রমাণে ১০ বছর জেল হওয়ার সম্ভাবনা।
তার পত্নী পুনম যাদব অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর ভারতীয় শাখাকে জানান,” ওর কাজের জন্য ওকে নানারকম ভাবে ভয় দেখানো হত। আমি ওকে অনেক সাবধান করেছি, এমনকি এই কাজ ছেড়ে অন্য কোথাও কাজ খুজতেও বলেছি। কিন্তু ও বোলতো, আমি অন্যকে সাহায্য করছি, আমি কাউকে ভয় পাইনা। পুলিশ ওকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে।“
সন্তোষ যাদবের আইনজীবী, ঈষা খান্ডেলয়াল, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভারতীয় শাখাকে জানান যে, সন্তোষ যাদবকে পুলিশ মনগড়া কারণে গ্রেফতার করেছে। সাংবাদিককে লক্ষ্যবস্তু বানানোর কারণ তার পাঠানো সংবাদে আদিবাসীদের ওপর পুলিশি অত্যাচারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়ে পড়ছিল। তিনি এও বলেন, “ ২০১৩ সাল থেকে পুলিশ ওকে উত্তক্ত করছে। একবারতো পুলিশ তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে উলঙ্গ করে অপমানিত করে। ওকে পুলিশি চর বানানোর অনেক চেষ্টা করা হয়েছে।“
“ তার একটাই অপরাধ, সে সাংবাদিকতার কাজকে ছাপিয়ে গ্রামবাসীদের আইনি সহায়তা পেতে সাহায্য করেছে। বাস্তারের পুলিশ চায়, সাংবাদিকরা কেবলমাত্র তাদের হয়েই কথা বোলবে। সন্তোষ যাদব দুদিকের কথাই তার লেখায় প্রকাশ কোরতো।“ ন্যাশনাল ডেলি পত্রিকার সাংবাদিক, রাজকুমার সোনি, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভারতীয় শাখাকে বলেন, “ পুলিশের বোঝা উচিৎ যে, উভয়পক্ষের কথাই বলা সাংবাদিকের কাজ। মাওবাদীদের সাথে কথা বলেছে বলেই একজন সাংবাদিক মাওবাদী হয়ে যায়না।“
তিনি আরও বলেন, “ আপনি কোনো ঘটনার বিষয় পুলিশের কাছে জানতে চাইলে, পুলিশ বোলবে, আপনি দেশদ্রোহী তাই আপনাকে কোনো তথ্য দেওয়া যাবেনা।বাস্তারে মাওবাদীদের সাথে আপনি সাংবাদিক হিসাবে কালেভদ্রে একবার কথা বোলতে পারবেন ঠিক যেমন মুম্বাইয়ের সাংবাদিকরা সেখানকার শিল্পপতি, রাজনীতিবিদ বা পুলিশ আধিকারিকের সাথে কথা বলেন কোনো ঘটনার বিষয় তাদের মতামত জানার জন্য। এমন কোনো আইন আছে কি যে সাংবাদিকরা মাওবাদীদের বক্তব্য প্রকাশ করতে পারবে না !”
লেখকঃ কোলকাতা
© বিডি থিংকার্স ২০২০
সম্পাদক ও প্রকাশক : উজ্বল মন্ডল
১৩৪২/২ পূর্ব শেওড়াপাড়া (৫ম তলা) | রানওয়ে রোড, কাফরুল, ঢাকা – ১২০৮ ।
ইমেইল: bdthinkers@gmail.com (এডিটোরিয়াল)
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা