বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে ফিরেই ভুটান সফরে গেলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও একটি সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছেন তবুও এ সফরের বার্তা স্পষ্ট: আমরাও এ অঞ্চলের পরাশক্তি। আমরা পৃথিবীর ৩২ তম বৃহৎ অর্থনীতি। দুনিয়ার হাতেগোনা কয়েকটি রাষ্ট্রের যে নিজেদের সমুদ্র আছে তারমধ্যে আমরা একটা। আমাদের নিজস্ব এবং পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ ও প্রাচীন সমুদ্র বন্দর রয়েছে। আমাদের বিপুল সংখ্যক কর্মক্ষম জনবল রয়েছে। আমাদের সচল উৎপাদন ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের সামরিক শক্তিও রয়েছে। এই অঞ্চলে বাণিজ্য সম্প্রসারণের সব যোগ্যতা রয়েছে বাংলাদেশের। পিছনে যাওয়ার বা পিছনে তাকানোর সময় আমাদের নেই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুটানে একটি সম্মেলনে গিয়ে ৬ টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছেন। ভুটানের সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধি করার দৃঢ় ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। অথচ এতবড় একটি ঘটনা বাংলাদেশের মিডিয়ায় দীর্ঘক্ষণ কাভারেজ পেলোনা। এমন কি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই জানেনা, প্রধানমন্ত্রী ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভুটান গিয়েছিলেন। ভুটানে তাঁকে রাজকীয় সম্মাননা দেয়া হয়েছে। ভুটানের রাজা ও প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে ডাক্তারদের সেদেশে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। বাংলাদেশের পণ্য ক্রয়ের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। বাংলাদেশ ভুটানকে তাঁর সমুদ্র বন্দর দিয়ে ব্যবসা ও বাণিজ্য করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমাদের বিমানবন্দর ব্যবহার করে একটি ট্যুরিজম করিডর ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এ এক ঐতিহাসিক সফর। অথচ জাতীয়তাবোধহীন মিডিয়া প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফরকে এজেন্ডা সেট করে বৃহৎ কাভারেজ দেয়নি। যারা দিয়েছে তারা গুরুত্বপূণূ সফরের অংশ অর্থাৎ ভুটানের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং আমাদের সমুদ্র বন্দরে ভুটানের আগমনী বার্তা সম্পর্কে কোন ফোকাস পয়েন্ট নেই। ভুটানের রাজা ভুটানে বাংলাদেশের দূতাবাসের জন্য একখণ্ড জমি পর্যন্ত দিতে তীব্র আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অথচ এটি জনগণের মুখে আলোচনার বিষয় না। ভুটান সফরে থেকে প্রাপ্তি ভারত সফরের প্রাপ্তির চেয়ে কোন অংশে কম নয়। কিন্তু এটি বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের সংবাদ থেকে বোঝার উপায় নেই। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এ এক লজ্জাজনক ঘটনা এবং সাংবাদিক ও মিডিয়াকে জবাবদিহি করানো উচিত এ কারণে। এই দেশের মিডিয়া এই দেশের আলো-বাতাস-শ্রমের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করবে অথচ লাল-সবুজ পতাকার বিজয়কেতন উড়াবেনা আকাশে। তা কেন হবে?
এই সফরের সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক অর্থনীতি বাংলাদেশের যে কতটা কল্যাণকর তা কি অনুধাবন করার মত মিডিয়াতে বিশেষ করে সংবাদমাধ্যমে কাজ করা কেউ নেই? একজনও নেই? হয় ইচ্ছা করে সংবাদকর্মীরা এটি কাভারেজ দেয়নি, অথবা ওরা জাতীয়তাবোধহীন। দেশের কল্যাণে সংবাদ করার কোন প্রয়োজনীয়তা ওরা বোধ করেনা। ভুটান যে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানকারী প্রথম বা দ্বিতীয় রাষ্ট্র এ কথা কি জানে নিউজমিডিয়ায় কাজ করা জাতীয়তাবোধহীন সাংবাতিকপাল? হ্যাঁ, সচেতনভাবেই এদের আমি সাংবাতিক বলি। কারণ এরা সানিলিওনে মেতে থাকে, তবু বাংলাদেশের সত্যিকার হিরোইন রাবেয়ার কাছে ওরা আসেনা। এরা বাতিক কারণ, এরা অনুৎপাদনশীল সুশীলদের কলামে পাতা ভরে রাখে, টকশোর সময় ভরে ফেলে, কিন্তু উৎপাদনের কারিগর কৃষক-শ্রমিক এদের পত্রিকায়, টিভিতে জায়গা পায়না। তাই দেশের কল্যাণে যখন অর্থনীতি সমুদ্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বাণিজ্য অঞ্চল বিস্তৃত করতে চাচ্ছেন সে বিষয়ে ওদের নজর নেই। ওরা বাংলাদেশের গেীরবময় অতীতে বিশ্বাস করেনা। তাই বাংলাদেশকে পরাশক্তি হিসেবে দেখার প্রবণতা ওদের দূষিত চিন্তায় নেই।
আমি সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের ছাত্র। আমি জানি সাংবাদিকতা কি। এটাও জানি কেন একটি সংবাদকে সংবাদকর্মীরা ‘হত্যা’ করে। তাদের এজেন্ডা থাকে এই সংবাদের প্রভাব থেকে জনগণকে দূরে রাখা। অথচ ভুটানের সাথে সম্পর্ক তৈরি হলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সেদেশে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারিত করতে পারেন। সম্ভবত বাংলাদেশের মিডিয়ার কর্তাদের এবং তাদের অনুগত ওয়াচডগদের এটা মেনে নিতে কষ্ট হয় যে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি উদীয়মান পরাশক্তি। বাংলাদেশে কাজ করে ভারতের বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবীকা নির্বাহ হয়। ভারতের অর্থনীতির পঞ্চম রেমিট্যান্স আসে বাংলাদেশ থেকে। শ্রীলঙ্কা ও নেপালের অনেকেই বাংলাদেশে কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করছে। মালদ্বীপের জনগণ বাংলাদেশে কাজ করছে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের জনগণ এদেশে আসছে কাজ করতে। চীনারা এখানে বিনিয়োগ করছে। মানে কি? মানে হচ্ছে বাংলাদেশ একটি অর্থনৈতিক পরাশক্তি হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। এখন মিডিয়াকে দেশের বেকার বসে থাকা মানুষগুলোকে উদ্যোক্তা হওয়ার আহবান জানিয়ে বারবার অনুপ্রেরণামূলক তথ্যচিত্র প্রকাশ করতে হবে, ফিচার প্রকাশ করতে হবে, ইতিবাচক সংবাদ করতে হবে। যে দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় এদেশের স্বাধীনচেতা স্বনির্ভর মানুষকে হীনমন্য করেছে জাতীয়তাবোধহীন ইতিহাসবিদ ও মিডিয়া সেটিকে বিনির্মাণ করতে হবে। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ সম্পদ এই তথ্য প্রচার করতে হবে।
শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের জায়েন্ট কোম্পানি যেমন আকিজ, প্রাণ, স্কয়ার, বিকন, যমুনাকে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ করতে উৎসাহ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের মানদণ্ডে ওরা অনেক নিচে আছে। এমন কি ভারতের কোন কোন প্রদেশের জীবনযাত্রার মানও বাংলাদেশের গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মানের চেয়ে অনেক নিচুতে। সুতরাং হতাশ হওয়ার কিছুই নেই। বাংলাদেশ জাগবেই। শুধু জাতীয়তাবোধ ধারণ করে হৃদয়ে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে হবে। দেশের পণ্য ব্যবহার করতে হবে। যে কোন মূল্যে দেশের পণ্যকে অগ্রাধীকার দিতে হবে। আজ আপনার হাত ধরে দেশের পণ্য বেশি বেশি ব্যবহৃত হলেই তো একসময় দেশীয় পণ্যের মান আরো বেশি বৃদ্ধি পাবে। একসময় সারা পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশের পণ্য এক নম্বর স্থান অর্জ ন করবে। সুতরাং দেশের ইতিবাচক সংবাদকে গুরুত্ত্ব সহকারে প্রচার করতে হবে।
শুধু নেতিবাচক নিউজ কাভার করাই সাংবাদিকতা নয়। সাংবাদিকতার অপর নাম মানবকল্যাণ করা। দেশের কল্যাণ করা, মানুষের কল্যাণ করা। এটাই সত্যিকার উন্নয়ন সাংবাতিদকতা। মনসান্তো আর সিনজেন্টা ব্যবহার করতে উৎসাহ দেয়া অপসাংবাদিকতা। ভুটানের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নব উদ্যমে তৈরি হওয়াই বাংলাদেশের প্রাপ্তি। এই প্রাপ্তিকে বড় করে সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরাই সাংবাদিকতা। বাংলাদেশ পরাশক্তি হলে যেন এ দেশের মিডিয়ার কিছু লোকের মুখের হাসি বিলুপ্ত হবে ভাবখানা এমন। না হলে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসসে প্রকাশিত নিম্মোক্ত লাইনগুলো কেন অন্য মিডিয়ায় বড় করে আসেনি?
‘দুই প্রধানমন্ত্রী জলবিদ্যুৎ, পানিসম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ট্যুরিজম, সংস্কৃতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইসিটি এবং কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, উভয় পক্ষ বিমসটেক, সার্ক ও জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সকল প্রধান ইস্যুতে তাদের মতামত ও অবস্থানসহ অন্যান্য আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে সহযোগিতার বিষয় মতবিনিময় করেন।
বাংলাদেশ ভুটানে আরো তৈরি পোশাক, সিরামিক, ওষুধ, পাট, পাটজাত ও চামড়াজাত পণ্য, প্রসাধন সামগ্রী ও কৃষি পণ্য রফতানির প্রস্তাব দেয়। ভুটান এসব পণ্য তার দেশের বাজারজাতকরণ ও দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অধিকতর সম্প্রসারণে একমত হয়।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে গুড়া চুন (লাইম স্টোন পাউডার), জিপ্যাম ও ক্যালসিয়াম কার্বোনেট রফতানিতে শুল্ক ছাড় সমস্যা নিষ্পন্নে তামাবিল-ডাউকি ও নাকুয়াগং-দালু, গোবরাকুরা ও কড়াইতলি-গাসুয়াপারান্দ স্থলবন্দর চালুসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।’
সফরে ২৬ দফা যৌথ বিবৃতিতে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাসো তোরেসিং তোগবে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ, পানি ও যোগাযোগ বৃদ্ধিতে দুই দেশের সহযোগিতা বৃদ্ধি করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। যারা মনেপ্রাণে বাংলাদেশকে ধারণ করেনা তারা এই ঐতিহাসিক সফরকে মিডিয়াতে গুরুত্ব সহকারে কাভারেজ দেয়নি। আমরা তরুণরা এই ব্যাপারটি ধরে ফেলেছি। সেদিন বেশি দূরে নেই যেদিন বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম থেকে নিড়ানী দিয়ে দেশের প্রতি মমত্ত্ববোধহীনদের বিতাড়িত করা হবে। বাংলাদেশ হবে কেবল তাদের যারা বাংলাদেশকে মনেপ্রাণে হৃদয়ে ১৯৭১ এর মহান স্বাধীনতাকে ধারণ করে। যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মত প্রবল জাতীয়তবোধসম্পন্ন মানসিকতা ধারণ করে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক, সামরিক ও সাস্কৃতিক পরাশক্তি করতে চায়।
জয়-হোক বাংলাদেশ-ভুটান বন্ধুত্ত্বের। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্য ছড়িয়ে পড়ুক দক্ষিণ এশিয়া থেকে পৃথিবীর সর্বপ্রান্তে।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা